বিদায় বুদ্ধবাবু: "একটি অধ্যায় শেষ, কিন্তু আদর্শ অমর"
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ( ১ মার্চ ১৯৪৪ - ৮ আগস্ট ২০২৪) পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএমের অন্যতম প্রধান নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর প্রয়াণে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সমগ্র ভারতবর্ষে এক যুগের অবসান ঘটল। বুদ্ধবাবু শুধু একজন রাজনীতিকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক সংস্কৃতিবান মানুষ, যিনি সাহিত্য, শিল্প, এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ পোষণ করতেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
প্রথম আলোয় সুর্য উঁকি দেয়,
পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে, ঐশ্বরিক কিরণ।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পদধ্বনি,
বাঁধা দেয় নতুন দিগন্তের ক্ষণ।
রাজনৈতিক প্রান্তর থেকে সাহিত্যের মঞ্চ,
মৃত্যুর গানেও অমর রূপে মঞ্চস্থ।
শিল্পায়নের স্বপ্নে ভরা হীরক খনি,
ভাষার অমৃত বাণীতে সুধা পরিশোধিত।
সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, বিতর্কের ঢেউ,
পথের ধুলোয় আঁকা চিহ্ন, ইতিহাসের বীণ।
তবে হৃদয়ের ভাষায়, চিরকাল স্মরণীয়,
বুদ্ধবাবুর প্রেরণায়, আলোয় বাঁধা দিন।
সংস্কৃতির কাছে ঋণী, কবিতা ও নাটকের সাথী,
সাধারণ জীবনযাপন, কিন্তু চিন্তা অতি গহীন।
রাজনৈতিক সাগরে তরী চালিয়ে,
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ইতিহাসে চিরকালীন।
আজ তুমি বিদায় নিলে, মুছে গেলো অন্ধকার,
কিন্তু তোমার আদর্শে, দীপ্তি জ্বলে আমাদের মনে।
এক অধ্যায় শেষ হয়েছে, তবে চিরকাল বাঁচবে,
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রেরণা, অমর দিনের পণ।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রস্থানে পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের রাজনীতিতে এক যুগের অবসান ঘটেছে। তিনি সিপিএমের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন এবং দীর্ঘ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর শাসনামলে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের প্রচেষ্টা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।
তবে, সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম ঘটনার মতো কিছু সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকে কড়া সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এসব বিতর্ক তাঁর শাসনামলের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে থেকে গেলেও, তাঁর উন্নয়নমূলক কাজ এবং সাধারণ মানুষের জন্য তাঁর অঙ্গীকার অনেকের মননে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন একজন সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ, সাহিত্য, শিল্প, এবং সংস্কৃতির প্রতি তাঁর আগ্রহ তাঁকে জনগণের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দিয়েছে। তাঁর লেখা এবং ভাষণগুলো তাঁর গভীর চিন্তাধারার প্রতিফলন এবং তাঁর রাজনীতির আদর্শিক দিকগুলোকে স্পষ্ট করে তুলে ধরে।
তাঁর প্রস্থান শুধুমাত্র একজন নেতার প্রস্থান নয়, বরং একটি আদর্শের, একটি দর্শনের প্রস্থান। তবে, তিনি যে আদর্শ এবং নীতি রেখে গেছেন, তা আজও অনেকের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
রাজনীতি থেকে সংস্কৃতির মিশেল:
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গকে এক নতুন দিশা দেখিয়েছিল। তাঁর শাসনামলে শিল্পায়নের যে প্রবাহ শুরু হয়েছিল, তা রাজ্যের অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করেছিল। কিন্তু তাঁর জীবনের গল্প শুধুমাত্র রাজনীতি দিয়ে মাপা যাবে না। সাহিত্য, সংস্কৃতি, এবং শিল্পের প্রতি তাঁর অনুরাগ তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল।
প্রগতি এবং প্রতিবাদ:
বুদ্ধবাবুর নামের সাথে যেমন প্রগতির ধারণা জড়িয়ে আছে, তেমনি রয়েছে সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃষ্টান্ত। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের মতো বিতর্কিত মুহূর্তগুলি যদিও সমালোচনার কারণ হয়েছিল, তবুও তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং দূরদর্শিতা তাঁকে একটি স্থায়ী স্থান এনে দিয়েছে।
অমর আদর্শ:
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন সাধারণ জীবনের পক্ষপাতী, কিন্তু তাঁর চিন্তাভাবনার জগৎ ছিল অসাধারণ। তাঁর লেখনী, বক্তৃতা, এবং কাজের মাধ্যমে তিনি মানুষের মনে প্রোথিত করে গেছেন এক অমর আদর্শ। তাঁর প্রয়াণে আমরা হারালাম একজন নেতাকে, কিন্তু তাঁর চিন্তা-চেতনা বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।
ব্যক্তিগত জীবন:
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন অত্যন্ত সাদামাটা জীবনের অধিকারী। তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য একজন সমাজসেবী হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁদের সংসার ছিল সাংস্কৃতিক মানসে পূর্ণ এবং জনকল্যাণে নিবেদিত।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এবং সংস্কৃতিতে এক বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তাঁর আদর্শ, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, এবং সাধারণ মানুষের প্রতি অঙ্গীকার আজও অনেকের জন্য প্রেরণা। তিনি চলে গেলেও তাঁর অবদান চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আজ আমরা বিদায় জানাই বুদ্ধবাবুকে, যিনি পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় রেখে গেলেন।