সীতারাম ইয়েচুরি প্রয়াত | বর্ষীয়ান সিপিআই(এম) নেতা সীতারাম ইয়েচুরির জীবন ও অবদান

সীতারাম ইয়েচুরি প্রয়াত | বর্ষীয়ান সিপিআই(এম) নেতা সীতারাম ইয়েচুরির জীবন ও অবদান

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-এর বর্ষীয়ান নেতা সীতারাম ইয়েচুরি ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রয়াত হয়েছেন। সমাজে ন্যায়বিচার ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য লড়াইয়ে তিনি তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯৫২ সালের ১২ই আগস্ট চেন্নাইয়ে জন্মগ্রহণ করা ইয়েচুরি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে সিপিআই(এম)-এ যোগ দেন। পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তিনি ২০১৫ থেকে ২০২২ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাগ্মিতা, লেখনী এবং নীতিগত অবস্থান ভারতীয় রাজনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষত সাম্যবাদ, গণতন্ত্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্নে।

পার্লামেন্টারি রাজনীতিতেও ইয়েচুরির অবদান অপরিসীম। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং দেশীয় রাজনৈতিক মঞ্চে বামপন্থীদের সংগঠিত করতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন। উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন।

তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে, যিনি সর্বদা সাধারণ মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।

আগামীকাল দিল্লিতে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের রেখে গেছেন। তাঁর প্রয়াণে ভারতের বাম আন্দোলনের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।

সীতারাম ইয়েচুরি: বর্ষীয়ান সিপিআই(এম) নেতার জীবন ও অবদান

সীতারাম ইয়েচুরি ছিলেন ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী বামপন্থী নেতা, যিনি কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে বাম আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, বাগ্মিতা এবং সমাজের প্রতি নিষ্ঠা তাঁকে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল।

প্রাথমিক জীবন:

সীতারাম ইয়েচুরি জন্মগ্রহণ করেন ১২ আগস্ট ১৯৫২ সালে চেন্নাইয়ে। তাঁর পিতামাতা ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষিত ছিলেন। ইয়েচুরি ছাত্রাবস্থায়ই রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সিপিআই(এম)-এর একজন প্রতিভাবান নেতা হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেন।

রাজনৈতিক জীবন:

সীতারাম ইয়েচুরি ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময় রাজনৈতিক মঞ্চে উঠে আসেন এবং তখন থেকেই তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তিনি সিপিআই(এম)-এর রাজনৈতিক ধারা এবং ভারতের বাম আন্দোলনের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৫ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০২২ পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।

অবদান ও নীতিগত অবস্থান:

ইয়েচুরি সবসময় সমাজতান্ত্রিক নীতি এবং সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষায় দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, এবং শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থে কথা বলেছিলেন। তাঁর বামপন্থী নীতি এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ তাঁকে একজন গণমানুষের নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

সাংসদ হিসাবে ভূমিকা:

ইয়েচুরি সংসদীয় রাজনীতিতেও যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন। রাজ্যসভার সদস্য হিসাবে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কে অংশ নিয়েছেন এবং বামপন্থী মতাদর্শ প্রচার করেছেন। তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও যুক্তিপূর্ণ আলোচনায় রাজনৈতিক মহলে তাঁর আলাদা পরিচিতি ছিল।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:

সীতারাম ইয়েচুরি শুধু ভারতের বাম আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করে ভারতের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন:

ইয়েচুরি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও সাদামাটা এবং সাধারণ ছিলেন। তিনি সবসময়ই একটি নিপাট জীবনযাপন করেছেন এবং সাধারণ মানুষের কষ্ট ও সমস্যার সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করেছেন। তাঁর ব্যক্তিত্বে সদা সততা ও নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটত।

সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণে ভারতীয় বাম আন্দোলনের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর অবদান ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্ব ও বামপন্থী আন্দোলন:

সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে সিপিআই(এম) পার্টি একটি শক্তিশালী ও সংগঠিত বামপন্থী শক্তি হিসেবে দেশের রাজনৈতিক পরিসরে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর অধীনে পার্টি শ্রমিক, কৃষক, এবং সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যায়। যদিও বামপন্থী শক্তি ধীরে ধীরে সংসদীয় রাজনীতিতে আসন হারাতে থাকে, ইয়েচুরি সর্বদাই দলের আদর্শিক অবস্থানে অটল থাকেন এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিপিআই(এম)-এর মতামত তুলে ধরেন।

ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই:

ইয়েচুরি বরাবরই ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচিতিকে রক্ষা করার জন্য কাজ করেছেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সামনের সারির একজন নেতা। তিনি বিশ্বাস করতেন, ধর্মনিরপেক্ষতাই ভারতের প্রকৃত শক্তি এবং বিভেদমূলক রাজনীতি দেশের জন্য ক্ষতিকর। এই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তিনি বহুবার রাজনৈতিক মঞ্চে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরোধিতা করেছেন।

শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বামপন্থী চেতনার বিস্তার:

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বামপন্থী চিন্তাধারার বিস্তার করতে ইয়েচুরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষিত যুব সমাজই সমাজের প্রকৃত পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। ছাত্র সংগঠন এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বামপন্থী চিন্তাভাবনা ও সমাজতান্ত্রিক নীতির প্রচারের মাধ্যমে তিনি তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

শেষ জীবন:

সীতারাম ইয়েচুরি শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও রাজনীতি থেকে পুরোপুরি সরে আসেননি। তিনি তাঁর পার্টি এবং আদর্শের প্রতি আজীবন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বের অভাব ভবিষ্যতে ভারতের বাম আন্দোলনে অনুভূত হবে। তবে তাঁর অবদান এবং সমাজের প্রতি নিষ্ঠা আজও লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করছে এবং আগামী দিনেও তাঁর নাম ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

 

 

 

Post Code : MzUt4Ka44KeH4Kaq4KeN4KafIDEyLCAyMDI0

photo

Robert Kottke


21.3k

Views

104

Following

42

Posts

Popular posts

Recent posts